Wednesday, February 14, 2018

-জাবি কেন সেরা?কেন এখানে এত কষ্ট করে ভর্তি হবেন?

#জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন সেরা?? আপনি কেন এত কষ্ট করে এখানে ভর্তি হবেন??? চলুন তার কিছু কারন জেনে নেইঃ
এই ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই যে- ঢাকার অদূরে সাভারে অবস্থিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় – দেশের অন্যতম সেরা একটি বিশ্ববিদ্যালয়। লেখাপড়া থেকে শুরু করে সংস্কৃতি চর্চা- সব ক্ষেত্রেই জাহাঙ্গীরনগরের রয়েছে আলাদা এক অবস্থান, রয়েছে আলাদা এক পরিচয়।পরিচয় থাকা জিনিসকেও মাঝে মাঝে আরেকটু স্পেশালি পরিচয় করিয়ে দিতে হয়। স্কুল আর কলেজ পাড়ি দেয়ার পরে একজন শিক্ষার্থীর জীবনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কি কি কারণে স্পেশাল হতে পারে, তার কিছু কারণ নিম্নে দেয়া হল –
১। #শহীদ মিনারঃ
দেশের সবচেয়ে উঁচু শহীদ মিনার(৭১ ফুট) এই ভার্সিটিতেই অবস্থিত। ছোটবেলায় কবিতা পড়েছিলাম- তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে, সবাইকে ছাড়িয়ে, উঁকি মারে আকাশে। বড় হয়ে তালগাছের কথা মনে না থাকলেও, জাবির শহীদ মিনার বারবার মনে করিয়ে দেয়- আকাশে উঁকি শুধু তালগাছই না, শহীদ মিনারও মারতে পারে।
২। #সেলিম আল দীন মুক্তমঞ্চঃ
সাংস্কৃতিক রাজধানী খ্যাত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থাপত্যের মধ্যে সবার আগে যে স্থাপত্যটি সবার নজর কাড়ে তা হলো ‘সেলিম-আল দীন মুক্তমঞ্চ’। লাল সিরামিক ইটের তৈরি মঞ্চটি ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য অক্ষুন্ন রেখে মুক্ত আকাশের নিচে গ্রীক এরিনা বা ওপেন এয়ার মঞ্চের আদলে মুক্তমঞ্চের স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। গ্রিক আদলে বাংলা ও ভারতীয় উপমহাদেশে সর্বপ্রথম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের মঞ্চ নির্মাণ করা হয়।
সাঁতার না জানা বাবুমশাইকে মাঝি বলেছিল- তার জীবনের ষোল আনাই নাকি মিছে। আর জাহাঙ্গীরনগরে এসে আপনি যদি বটতলায় খাবার না খান, তাহলে আপনার ক্ষেত্রে “ষোল আনাই মিছে” কথাটা বেশ ভাল যায়। মোটেও বাড়িয়ে বলছি না- এত কম দামে এত সুস্বাদু খাবার দেশের আর খুব কম জায়গায়ই খুঁজে পাওয়া যাবে।
এখানকার ভর্তার স্বাদ একবার যে চেখে দেখেছে, সে যতবার এখানে আসবে ততবার শুধু ভর্তা দিয়েই একাধিক প্লেট ভাত সাবাড় করে দিতে পারবে। বটতলার একটি বিখ্যাত দোকানের নাম- কেএফসি- জি না, এটা কোন ফ্রায়েড চিকেনের দোকান নয়, বরং দোকানের মালিকের নাম “কাদের” দেখে সেই নামের সাথে মিল রেখে- কাদের ফুড সেন্টার এর সংক্ষিপ্ত নাম হয়েছে- কেএফসি। এমনটা শুধু জাহাঙ্গীরনগরেই সম্ভব!
ঢাকাবাসীদের জন্য ক্যাম্পাস থেকে বাস ছেড়ে যাওয়ার জায়গাটির নাম ট্রান্সপোর্ট।
অনেক ছোট ছোট দোকানে চায়ের কাঁপে চুমুক দিতে দিতে আপনি হারিয়ে যাবেন পুরনো কোন স্মৃতিতে আর চারপাশে তো সবসময় থাকেই বর্তমানের কোলাহল- সব মিলিয়ে এটাই ট্রান্সপোর্ট।
৫। #ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রঃ
জাহাঙ্গীরনগরের সবচেয়ে আধুনিক আর অন্যতম সংযোজন হচ্ছে এই গবেষণা কেন্দ্র। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বামীর নামের তৈরি এই গবেষণা কেন্দ্রটি এখন পর্যন্ত দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় গবেষণা কেন্দ্র- আশা করি এর ব্যাপারে আর বেশি কিছু বলা লাগবে না।
৬। #দেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ঃ
জি হ্যাঁ, একমাত্র জাহাঙ্গীরনগরেই আছে এখানকার প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য হলে থেকে পড়াশুনার সুব্যবস্থা। ক্যাম্পাসের প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য হলে একটি করে সিট বরাদ্দ আছে।
৭। #প্রজাপতি মেলাঃ
বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে শুধুমাত্র জাহাঙ্গীরনগরেই আপনি দেখা পাবেন প্রজাপতি নিয়ে ভিন্নধর্মী এক মেলার আয়োজন যা বাংলাদেশের অন্য কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই। শুদু তাই নয়, প্রজাপতির জন্য রয়েছে এখানে আলাদা বাটারফ্লাই পার্ক।
৮। #অতিথি পাখিঃ
প্রতি বছর সাইবেরিয়া থেকে হাজার মাইল দূরত্ব পেরিয়ে শত শত অতিথি পাখি শুধুমাত্র জাহাঙ্গীরনগরে উড়ে আসে, যেটা দেশের অন্য কোথাও দেখা যায়না। অতিথি পাখির কিচিরমিচির শুনতে আর তাদের সৌন্দর্য উপভোগ করতে এখানে প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে হাজির হয় শত শত মানুষ।
৯। #মেডিকেল এর পিঠাঃ
বটতলা তার স্বমহিমায় উজ্জ্বল থাকলেও, মেডিক্যাল এর সামনের অংশে গড়ে উঠা পিঠাচত্বর ও কিন্তু কোন অংশে পিছিয়ে নেই। মাত্র ১০ টাকা থেকে শুরু করে ৩০ টাকায় এখানে পাওয়া যায় দারুণ সুস্বাদু সব পিঠা। ঝাল, মিষ্টি- সব ধরনেই পিঠাই পাবেন এখানে।
১০। #নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যঃ
আর সব কিছু বাদ দিলেও, শুধুমাত্র সাড়ে সাতশ একরের জাহাঙ্গীরনগরে ঘুরে আপনার চোখদুটো যেই শান্তি পাবে, সেই শান্তি আপনি আর খুব কম জায়গাতেই পাবেন।
জাহাঙ্গীরনগরের বিভিন্ন লেক, বিস্তীর্ণ সেন্ট্রাল ফিল্ড, বোটানিক্যাল গার্ডেন- এসবের সৌন্দর্য ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।
ক্যাম্পাসের বাইরে থেকে জাহাঙ্গীরনগর সম্পর্কে নানা কথা শোনা যায়। সেখান ভাল-মন্দ দুটোরই মিশ্রণ থাকে। তবে একটি না কথা না বলে পারছি না- আপনি নিজে যদি জাহাঙ্গীরনগরের একজন সদস্য না হন, তাহলে আসলে কখনই বুঝতে পারবেন না আসল জাহাঙ্গীরনগর কি জিনিস। গেটের বাইরে থেকে একরকম মনে হলেও- ক্যাম্পাসের ভেতরে ঢুকলেই- এ এক আলাদা জগত, যার তুলনা শুধু সেইই- নাম তার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। এরপরে বাকিটা আপনার বিবেচনা ? আমন্ত্রণ থাকলো একদিন এই ক্যাম্পাসে ঘুরে যাওয়ার, সিদ্ধান্ত না হয় এরপরেই নিবেন?
সবশেষে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে জাবিতে ভর্তি পরীক্ষার্থীদের জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইলো।
সোহেল রানা
সরকার ও রাজনীতি, জাবি।।।

No comments:

Post a Comment